হিন্দু ধর্মের কু প্রথা কি কি

 হিন্দু সমাজে বিভিন্ন সময়ে কিছু কুপ্রথা প্রচলিত ছিল, যা নারীদের প্রতি অবিচার, সামাজিক বৈষম্য ও মানবাধিকারের পরিপন্থী ছিল। তবে সমাজ সংস্কারকদের প্রচেষ্টায় অনেকগুলো আজ বিলুপ্ত হয়েছে বা ক্ষীণ হয়ে গেছে। নিচে হিন্দু ধর্মে অতীতে প্রচলিত কিছু কুপ্রথা উল্লেখ করা হলো—


১. সতীদাহ প্রথা


স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে তার সঙ্গে চিতায় জ্বলতে বাধ্য করা হতো।


এটি একসময় মহীয়সী স্ত্রীর চিহ্ন হিসেবে দেখা হতো, কিন্তু বাস্তবে এটি ছিল চরম অত্যাচার।


১৮২৯ সালে রাজা রামমোহন রায় ও ব্রিটিশ সরকার এই প্রথা নিষিদ্ধ করে।



২. বিধবা প্রথা


বিধবা নারীদের পুনরায় বিয়ের অধিকার ছিল না।


তাদের সাদা পোশাক পরতে হতো, অলংকার ত্যাগ করতে হতো, এবং অনেক ক্ষেত্রে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হতো।


১৮৫৬ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় বিধবা বিবাহ আইন চালু হয়।



৩. বাল্যবিবাহ


অল্প বয়সী মেয়েদের (৬-১০ বছর বয়সে) বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো।


এর ফলে তারা অল্প বয়সেই মাতৃত্বের ঝুঁকিতে পড়ত এবং অনেক সময় বিধবা হয়ে নিপীড়নের শিকার হতো।


১৮৯১ সালে ব্রিটিশ সরকার ‘Age of Consent Act’ পাশ করে, যা বিয়ের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করে।



৪. অস্পৃশ্যতা (জাতিভেদ প্রথা)


সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চারটি বর্ণভিত্তিক বিভাজন করা হতো।


তথাকথিত 'অস্পৃশ্য' বা নিম্নবর্ণের মানুষদের মন্দিরে প্রবেশ, পানির কূপ ব্যবহার বা উচ্চবর্ণের সংস্পর্শে আসা নিষিদ্ধ ছিল।


সংবিধান রচয়িতা ড. বি.আর. আম্বেদকরের প্রচেষ্টায় ১৯৫০ সালে ভারতীয় সংবিধানে অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধ করা হয়।



৫. দেবদাসী প্রথা


কম বয়সী মেয়েদের মন্দিরে দান করা হতো এবং তারা দেবতার সেবিকা হিসেবে কাজ করত।


বাস্তবে, অনেক দেবদাসীকে যৌনকর্মে বাধ্য করা হতো।


১৯৮৮ সালে ভারত সরকার দেবদাসী প্রথা নিষিদ্ধ করে।



৬. দেহজীবন ত্যাগ বা সন্ন্যাস প্রথা


সমাজে প্রচলিত ছিল, একজন নারীর স্বামী মারা গেলে তাকে সংসার ত্যাগ করে আশ্রমে জীবনযাপন করতে হবে।


অনেক বিধবাকে জোর করে সন্ন্যাসিনী বানিয়ে দেয়া হতো।



৭. কৌলীন্য প্রথা


সমাজে উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণদের মধ্যে একাধিক বিবাহের প্রচলন ছিল।


অনেক ক্ষেত্রে বৃদ্ধ ব্রাহ্মণরা অনেক কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে করত, যা নারীদের প্রতি চরম অন্যায় ছিল।



উপসংহার


উল্লিখিত কুপ্রথাগুলোর বেশিরভাগই আজ বিলুপ্ত বা আইনিভাবে নিষিদ্ধ, তবে কিছু সামাজিক প্রথার প্রভাব এখনো কিছু অঞ্চলে রয়ে গেছে। সমাজ সংস্কারকরা শিক্ষা, আইন ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে এগুলো দূর করার চেষ্টা করেছেন।



Post a Comment

0 Comments

Close Menu