বিধবা প্রথা বলতে সাধারণত হিন্দু সমাজে বিধবা নারীদের জন্য আরোপিত বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়মকে বোঝায়। এটি মূলত মধ্যযুগ থেকে কঠোরভাবে প্রচলিত হয় এবং বিধবা নারীদের জীবনকে সীমাবদ্ধ করে রাখত।
বিধবা প্রথার নিয়মাবলী:
১. পুনরায় বিবাহ নিষিদ্ধ:
- বিধবা নারীরা দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারতেন না, যদিও পুরুষদের জন্য এই নিয়ম প্রযোজ্য ছিল না।
- সমাজে বিধবা বিবাহকে অপরাধ বা অসম্মানজনক হিসেবে দেখা হতো।
2. পোশাক ও সাজসজ্জার বিধিনিষেধ:
- বিধবাদের সাদা কাপড় পরতে হতো, যা শোকের প্রতীক হিসেবে ধরা হতো।
- তারা গয়না ও সাজসজ্জা করতে পারতেন না।
৩. খাদ্যসংযম:
- বিধবাদের নিরামিষ আহার করতে হতো, অনেক সময় একবেলা বা নির্দিষ্ট পরিমাণে খাবার খাওয়ার নিয়ম ছিল।
- পেঁয়াজ, রসুন বা অন্যান্য কিছু খাবার নিষিদ্ধ ছিল।
৪. সামাজিক ও পারিবারিক নিষেধাজ্ঞা:
- বিধবাদের পরিবারের শুভ কাজে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হতো না।
- অনেক সময় তাদের আলাদা থাকতে বাধ্য করা হতো বা আশ্রমে পাঠানো হতো।
- তাদের সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিতি অপয়া বলে মনে করা হতো।
৫. সতীদাহ প্রথা (কঠোরতম নিয়ম):
- কিছু সমাজে বিধবাদের স্বামীর মৃত্যুর পর চিতায় আত্মাহুতি দিতে বাধ্য করা হতো, যা সতীদাহ নামে পরিচিত।
- ১৮২৯ সালে রাজা রামমোহন রায়ের প্রচেষ্টায় এই নিষ্ঠুর প্রথা বন্ধ করা হয়।
৬. ধর্মীয় অনুশাসন ও কঠোর জীবনযাপন:
- বিধবাদের ধর্মগ্রন্থ পাঠ ও দীর্ঘ সময় উপবাস করতে বলা হতো।
- অনেকে মাথা ন্যাড়া করতেন বা সরল জীবনযাপনে বাধ্য হতেন।
পরিবর্তন ও বর্তমান অবস্থা:
- ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয়, যা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টার ফল।
- ধীরে ধীরে বিধবা নারীদের প্রতি এই কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল হয়।
- বর্তমানে সমাজের অনেকাংশে এই প্রথা বিলুপ্ত হলেও কিছু জায়গায় বিধবা নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ এখনও বিদ্যমান।
উপসংহার:
বিধবা প্রথার নিয়মগুলি একসময় সমাজে নারীদের প্রতি বৈষম্যের প্রতিচিত্র ছিল। যদিও আইন ও শিক্ষার প্রসারে এই নিয়ম অনেকটাই বিলুপ্ত, কিছু সংস্কার ও কুসংস্কার এখনও কিছু জায়গায় রয়ে গেছে।
0 Comments