না, হিন্দু ধর্মে প্রচলিত সকল কুপ্রথা শুধু মেয়েদের জন্য ছিল না। যদিও বেশিরভাগ কুপ্রথা নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক ছিল, তবে কিছু প্রথা ছিল যা পুরুষদের ওপরও প্রভাব ফেলেছিল বা গোটা সমাজকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। নিচে হিন্দু সমাজে প্রচলিত কুপ্রথাগুলোর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ দেওয়া হলো—
---
নারীদের জন্য কুপ্রথা:
১. সতীদাহ প্রথা – স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে তার চিতায় আত্মাহুতি দিতে বাধ্য করা হতো।
2. বিধবা প্রথা – বিধবা নারীদের পুনরায় বিয়ের অধিকার ছিল না এবং কঠোর জীবনযাপন করতে হতো।
3. বাল্যবিবাহ – অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো, যা তাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার জন্য ক্ষতিকর ছিল।
4. দেবদাসী প্রথা – কম বয়সী মেয়েদের মন্দিরে উৎসর্গ করা হতো, যা পরে যৌন শোষণের রূপ নেয়।
5. কৌলীন্য প্রথা – উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণদের মধ্যে বহু বিবাহের প্রচলন ছিল, যেখানে কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেওয়া হতো।
6. নারীদের শিক্ষা নিষেধাজ্ঞা – মেয়েদের শিক্ষার অধিকার ছিল না বা তা অত্যন্ত সীমিত ছিল।
---
পুরুষদের জন্য কুপ্রথা:
1. জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা প্রথা – সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চারটি বর্ণভিত্তিক বিভাজন করা হতো, যেখানে নিম্নবর্ণের পুরুষরা উচ্চবর্ণের লোকদের মতো অধিকার পেত না।
2. দারিদ্র্য ও ঋণশোধের কঠোরতা – অনেক নিম্নবর্ণের মানুষকে সমাজের নিয়মে বাধ্য হয়ে জমিদার বা ব্রাহ্মণদের কাছে সারাজীবন ঋণশোধ করতে হতো, যা প্রায় দাসত্বের শামিল ছিল।
3. কুষ্ঠ বা অসুস্থ ব্যক্তিদের সমাজচ্যুতি – যেসব পুরুষ শারীরিকভাবে অক্ষম বা অসুস্থ হতো, তাদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হতো।
4. গুরুবাদ ও অন্ধবিশ্বাস – ব্রাহ্মণ বা গুরুদের কথাই ছিল চূড়ান্ত, যার ফলে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা অনেক ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত হতো।
---
সমাজের সকলের জন্য কুপ্রথা:
1. উঁচু-নিচু ভেদাভেদ – সমাজের উচ্চবর্ণ ও নিম্নবর্ণের মধ্যে প্রচণ্ড বৈষম্য ছিল।
2. মানব বলিদান প্রথা – অতীতে দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য মানুষ বলি দেওয়া হতো।
3. দাসপ্রথা ও ক্রীতদাস ব্যবসা – নিম্নবর্ণের মানুষদের কখনো কখনো দাস হিসেবে বিক্রি করা হতো।
4. যজ্ঞ ও পশুবলি প্রথা – ব্রাহ্মণ্য সমাজে যজ্ঞের জন্য বিপুলসংখ্যক পশু বলি দেওয়া হতো।
---
উপসংহার:
যদিও নারীরা সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হয়েছে, তবে হিন্দু সমাজের কুপ্রথা শুধুমাত্র নারীদের জন্যই ছিল না। নিম্নবর্ণের পুরুষরাও কঠোর বৈষম্যের শিকার হতো, এবং কিছু প্রথা গোটা সমাজের জন্যই ক্ষতিকর ছিল। সমাজ সংস্কারকদের প্রচেষ্টায় এসব কুপ্রথার বেশিরভাগই বিলুপ্ত হয়েছে, তবে কিছু কিছু রীতি ও বৈষম্য এখনো সামাজিকভাবে টিকে আছে।
0 Comments