ইহুদিধর্ম (খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ - বর্তমান)
ইহুদিধর্ম (Judaism) বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন একেশ্বরবাদী (Monotheistic) ধর্ম, যা মূলত ইসরায়েলি ও ইহুদি জাতির মধ্যে প্রচলিত। এটি খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম ধর্মের ভিত্তি হিসাবে বিবেচিত হয়, কারণ এই ধর্ম থেকেই এক ঈশ্বরের ধারণার বিস্তার ঘটে।
ইতিহাস ও বিকাশ
১. পিতৃপুরুষ যুগ (খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ - ১৫০০)
ইহুদিধর্মের উৎপত্তি বাইবেলের পুরাতন নিয়মের (Old Testament) তোরাহ (Torah) অনুযায়ী, হযরত ইবরাহিম (আব্রাহাম) থেকে শুরু হয়।
ইবরাহিম বিশ্বাস করতেন এক ঈশ্বরে (যিহোবা / Yahweh) এবং তাঁর নেতৃত্বে ইহুদি জাতির ভিত্তি স্থাপিত হয়।
ইহুদিরা মূলত কানান (বর্তমান ইসরায়েল ও প্যালেস্টাইন) অঞ্চলে বসবাস করত।
২. মুসা (মোজেস) ও দশ আজ্ঞা (খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ - ১২৫০)
হযরত মুসা (মোজেস) ইহুদি জাতিকে মিসরের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেন, যা এক্সোডাস (Exodus) নামে পরিচিত।
সিনাই পর্বতে তিনি দশ আজ্ঞা (Ten Commandments) লাভ করেন, যা ইহুদিধর্মের মৌলিক আইন।
৩. প্রাচীন ইহুদি রাজত্ব (খ্রিস্টপূর্ব ১০২০ - ৫৮৭)
রাজা শাউল, দাউদ (ডেভিড) ও সলোমন শাসন করেন।
সোলোমনের মন্দির নির্মিত হয় জেরুজালেমে।
পরবর্তীতে ব্যাবিলনীয়রা ইহুদি রাজত্ব ধ্বংস করে এবং অনেক ইহুদিকে বন্দি করে।
৪. দ্বিতীয় মন্দির যুগ (খ্রিস্টপূর্ব ৫৩৯ - ৭০ খ্রিস্টাব্দ)
পারস্য সম্রাট সাইরাস ইহুদিদের জেরুজালেমে ফিরে যেতে দেন এবং দ্বিতীয় মন্দির নির্মিত হয়।
৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা এই মন্দির ধ্বংস করে, ফলে ইহুদিরা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে (ডায়াসপোরা / Diaspora)।
৫. মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগ (৭০ খ্রিস্টাব্দ - বর্তমান)
ইহুদিরা ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যা আধুনিক ইহুদিধর্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধান বিশ্বাস ও শিক্ষা
১. এক ঈশ্বর (Monotheism)
ইহুদিরা বিশ্বাস করে যিহোবা (Yahweh) একমাত্র সত্য ঈশ্বর।
তিনি সৃষ্টিকর্তা এবং ন্যায়বিচারক।
২. ধর্মগ্রন্থ
তোরাহ (Torah) – ইহুদিদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ, যা প্রথম পাঁচটি বই নিয়ে গঠিত (পেন্টাটিউক)।
তানাখ (Tanakh) – হিব্রু বাইবেল, যা খ্রিস্টধর্মের পুরাতন নিয়মের সাথে সম্পর্কিত।
তালমুদ (Talmud) – ইহুদিদের ধর্মীয় আইন ও ব্যাখ্যার সংকলন।
৩. মেসিয়াহ (Messiah) ধারণা
ইহুদিরা বিশ্বাস করে ভবিষ্যতে মেসিয়াহ আসবেন, যিনি তাদের মুক্তি দেবেন।
৪. ধর্মীয় আইন ও নৈতিকতা
১০টি আজ্ঞা (Ten Commandments) অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।
কোশের (Kosher) খাদ্যবিধি পালন করা হয়।
উপাসনা ও আচার-অনুষ্ঠান
১. উপাসনার স্থান
সিনাগগ (Synagogue) – ইহুদিদের উপাসনালয়।
রব্বি (Rabbi) – ইহুদি ধর্মগুরু।
২. গুরুত্বপূর্ণ উৎসব
সবাথ (Sabbath) – প্রতি শনিবার ঈশ্বরের বিশ্রামের দিন।
পাসওভার (Passover) – মিসর থেকে মুক্তির স্মরণে পালন করা হয়।
হানুক্কাহ (Hanukkah) – দ্বিতীয় মন্দির পুনরুদ্ধারের স্মরণে।
ইয়ম কিপুর (Yom Kippur) – ক্ষমা প্রার্থনার দিন।
উপসংহার
ইহুদিধর্ম কেবল একটি ধর্ম নয়, এটি ইহুদি জাতির সংস্কৃতি, ইতিহাস ও জীবনধারার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম ধর্মের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং এখনও বিশ্বে একটি উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে টিকে আছে।
0 Comments