পুত্রদা একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য

 পুত্রদা একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য





ভদ্রাবতী পুরীতে সুকেতুমান নামে এক রাজা ছিলেন এবং তার রানীর নাম ছিল শেব্যা। রাজদম্পতি বেশ সুখেই দিনযাপন করছিলেন। 

 

 কিন্তু  বহুদিন ধরে বংশরক্ষার জন্য অনেক ধর্ম-কর্মের অনুষ্ঠান করেও যখন পুত্রলাভ হল না, তখন রাজা দুশ্চিন্তায় কাতর হয়ে পড়লেন। তাই সকল ঐশ্বর্যবান হয়েও পুত্রহীন রাজার মনে কোন সুখ ছিল না।

 

তিনি ভাবতেন  লাগলেন  পুত্রহীনের জন্ম বৃথা ও গৃহশূণ্য তাই তিনি  পিতৃ-দেব-মনুষ্যলোকের কাছে যে ঋণ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, তা পুত্র বিনা পরিশোধ হয় না। 

 

পুত্রবানজনের এ জগতে যশলাভ ও উত্তম গতি লাভ হয় এবং তাদের আয়ু, আরোগ্য, সম্পত্তি প্রভৃতি বিদ্যমান থাকে। এই সকল দুশ্চিন্তাগ্রস্ত  ভাবনায় রাজা আত্মহত্যা করবেন বলে স্থির করলেন। 

 

কিন্তু পরে বিচার করে দেখলেন- ‘আত্মহত্যা করা  মহাপাপ, এরফলে কেবল শুধু দেহের বিনাশমাত্র ঘটবে, কিন্তু আমার পুত্রহীনতা তো দূর হবে না।


তারপর একদিন রাজা নিবিড় বনে যাত্রা শুরু করলেন। বন ভ্রমণ করতে করতে দ্বিপ্রহর অতিক্রান্ত হলে রাজা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় অত্যন্ত কাতর হয়ে উঠলেন  । এদিক ওদিক জলাদির অনুসন্ধান করতে শুরু করলেন।কিন্তু তিনি শুদু মাত্র চক্রবাক,  রাজহংস এবং নানারকম মাছে পরিপূর্ণ একটি মনোরম সরোবর দেখতে পেলেন। সেই সরোবরের কাছে মুনিদের একটি আশ্রম ছিল। তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন এবং দেখতে পেলেন  সরোবর তীরে মুনিগণ বেদপাঠ করছিলেন। মুনিবৃন্দের শ্রীচরণে সুকেতুমান রাজা দন্ডবৎ প্রণাম করলেন।


মুনিগণ রাজাকে বলতে লাগলেন -হে মহারাজ! আমরা ‘বিশ্বদেব’ নামে প্রসিদ্ধ। এই সরোবরে  

আমরা স্নান করতে এসেছি। আজ থেকে পাাঁচদিন পরেই হবে মাঘ মাস আরম্ভ । তাই  আজ পুত্রদা একাদশী তিথি। পুত্র দান করে বলেই এই একাদশীর নাম হয়েছে‘পুত্রদা’ একাদশী ।


মুনিগণের কথা শুনে রাজা বললেন-হে মুনিবৃন্দ! আমি অপুত্রক। তাই পুত্র কামনায়  আমি অধীর হয়ে পড়েছি। এখন আপনাদের দেখে আমার হৃদয়ে আশার সঞ্চার হয়েছে। এ দুর্ভাগা পুত্রহীনের প্রতি অনুগ্রহ করে আমাকে একটি পুত্র প্রদান করুন ।


মুনিগণ বললেন- হে মহারাজ! আজ সেই পুত্রদা একাদশী তিথি। যদি আপনি এই ব্রত পাল করুন তাহলে ভগবান শ্রীকেশবের অনুগ্রহে অবশ্যই আপনার পুত্র লাভ হবে। 

 

মুনিদের কথা শোনার পর যথাবিধানে রাজা কেবল ফলূমূলাদি আহার করে সেই ব্রত অনুষ্ঠান করলেন। দ্বাদশী দিনে উপযুক্ত সময়ে শস্যাদি সহযোগে পারণ করলেন। মুনিদের প্রণাম নিবেদন করে নিজগৃহে ফিরে এলেন। প্রতভাবে রাজার যথাসময়ে একটি তেজস্বী পুত্র লাভ হল।




Post a Comment

0 Comments

Close Menu