দেবদাসী প্রথা: এক নিষ্ঠুর সামাজিক রীতি
দেবদাসী প্রথা হল একটি প্রাচীন হিন্দু ধর্মীয় ও সামাজিক প্রথা, যেখানে কম বয়সী মেয়েদের মন্দিরে "দেবতার স্ত্রী" হিসেবে উৎসর্গ করা হতো। যদিও এটি ধর্মীয় কাজ হিসেবে শুরু হয়েছিল, পরে এটি যৌন শোষণ ও নিপীড়নের রূপ নেয়।
---
দেবদাসী প্রথার উৎপত্তি ও কারণ
প্রাচীন ভারত: প্রথম দিকে দেবদাসীরা মন্দিরে নৃত্য ও সংগীত পরিবেশন করত এবং তাদের ধর্মীয় কাজের জন্য সম্মানিত মনে করা হতো।
মধ্যযুগে (১০-১৩ শতকে): মুসলিম শাসনের সময় দেবদাসী প্রথা দুর্বল হতে থাকে, কিন্তু অনেক জমিদার ও রাজারা মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত এই প্রথাকে ব্যবহার করতে শুরু করেন।
ব্রিটিশ আমলে: ব্রিটিশরা এই প্রথার বিরুদ্ধে আইন করার আগ পর্যন্ত, দেবদাসীদের প্রতি যৌন শোষণ বৃদ্ধি পায় এবং এটি একটি অবৈধ পতিতাবৃত্তির আকার নেয়।
---
দেবদাসী প্রথার নিয়মাবলী
১. কম বয়সে উৎসর্গ: সাধারণত ৫-১০ বছর বয়সী মেয়েদের দেবতার নামে মন্দিরে দান করা হতো।
2. বিয়ে নিষিদ্ধ: দেবদাসীরা সাধারণত বিবাহ করতে পারত না, কারণ তারা "দেবতার স্ত্রী" বলে বিবেচিত হতো।
3. রাজা ও জমিদারদের দ্বারা শোষণ: অনেক রাজা, জমিদার ও উচ্চবর্ণের পুরুষরা তাদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করত।
4. প্রজন্মের পর প্রজন্মে চলমান: অনেক ক্ষেত্রে দেবদাসীদের মেয়েরাও একই পরিণতির শিকার হতো।
5. সামাজিক নিগ্রহ: দেবদাসীরা সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পেত না এবং তাদের "অপবিত্র" মনে করা হতো।
---
দেবদাসী প্রথার বিলোপ ও আইন
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর এই প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।
১৯৮৮ সালে ভারত সরকার "দেবদাসী প্রথা নিষিদ্ধ আইন" পাশ করে, যা এটিকে সম্পূর্ণ অবৈধ ঘোষণা করে।
বর্তমান পরিস্থিতি: যদিও আইনত এটি নিষিদ্ধ, তবে ভারতের কিছু অঞ্চলে (বিশেষ করে কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র) এটি এখনো গোপনে চালু আছে।
---
উপসংহার
দেবদাসী প্রথা একসময় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার অংশ থাকলেও, পরে তা যৌন শোষণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতীকে পরিণত হয়। আইন ও সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে এটি বন্ধ করা গেলেও, এখনো কিছু জায়গায় এটি রয়ে গেছে, যা সম্পূর্ণ নির্মূল করতে আরও সচেতনতা ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
0 Comments