যোগিনী একাদশী
আষাঢ় মাসের কৃষ্ণ পক্ষীয়া একাদশী ‘যোগিনী’ নামে খ্যাত। মহাপাপ নাশকারী এই তিথি ভব সাগরে পতিত মানুষের উদ্ধার লাভের একমাত্র নৌকা স্বরূপ। এই প্রসঙ্গে আপনাকে একটি পবিত্র পৌরাণিক কাহিনী বলছি।
অলকা নগরে শিবভক্ত পরায়ণ কুবের নামে এক রাজা ছিলেন। তিনি প্রতিদিন শিবপূজা করতেন। তার হেমমালী নমে এক মালী ছিল। প্রতিদিন শিব পূজার জন্য মানস সরোবর থেকে হেমমালী ফুল তুলে যক্ষরাজ কুবেরকে এনে দিত। হেমমালীর এক পরমা রূপবতী পত্নী ছিল। হেমমালী তার সুন্দরী পত্নীর প্রতি অত্যন্ত আসক্ত ছিল।
হেমমালী একদিন সে তার স্ত্রীর প্রতি কামাসক্ত হয়ে রাজভবনে যাওয়ার কথাও ভুলে গেল। বেলা দুই প্রহর অতীত হল কিন্তু হেমমালী এলো না । অর্চনের সময় চলে যাচ্ছে দেখে রাজা খুব ক্রুদ্ধ হলেন। মালীর বিলম্বের কারণ যানতে অনুসন্ধানে এক দূত প্রেরণ করলেন। দূত এসে রাজাকে বলল-‘সে গৃহে স্ত্রীর সাথে আনন্দে মত্ত আছে ।’ দূতের কথা শুনে কুবের অত্যন্ত রেগে তখনি মালীকে তার সমনে হাজির করতে আদেশ দিলেন ।
এদিকে হেমমালী কুবেরের পূজার সময় অতিবাহিত হয়েছে বুঝতে পেরে অত্যন্ত ভয় পেল। তাই সে স্নান না করেই রাজার কাছে উপস্থিত হল। কিন্তু হেমমালী দেখামাত্র রাজা ক্রোধবশে চোখ রাঙিয়ে বললেন-রে পাপিষ্ঠ, দুরাচার! তুই দেবপূজার ফুল আনতে অবজ্ঞা করেছিস তাই তোকে অভিশাপ দিচ্ছি “তুই শ্বেতকুষ্ঠগ্রস্থ হয়ে যাবি এবং তোর স্ত্রী ভার্যার সাথে তোর চিরবিয়োগ সংগঠিত হোক”।
কুবেরের এই অভিশাপে পেয়ে মালী তার পত্নীর সাথে স্বর্গভ্রষ্ট হয়ে দীর্ঘকাল যাবৎ কুষ্ঠরোগে ভোগ করতে লাগল। রোগের যন্ত্রণায় দিন বেদনায় বহুকষ্টে হেমমালী জীবন যাপন করতে লাগল কিন্তু দীর্ঘদিন মহাদেবের অর্চনের ফুল সংগ্রহের করেছিল বলে সুকৃতির ফলে সে শাপগ্রস্ত হয়েও বৈষ্ণব শ্রেষ্ঠ শিবের বিস্মরণ হয়নি।
একদিন হেমমালী ভ্রমণ করতে করতে হিমালয়ে শ্রী মার্কন্ডেয় ঋষির আশ্রমে উপস্থিত হলেন। কুষ্ঠরোগে পীড়িত সপত্নী হেমমালীকে দর্শন করে শ্রী মার্কেন্ডয় তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন-‘তুমি কার অভিশাপে এইরকম নিন্দনীয় কুষ্ঠরোগ গ্রস্ত হয়েছ?’
হেমমালী শ্রী মার্কন্ডেয় ঋষির কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বল।
পরোপকারই ছিল সাধুগণের স্বাভাবিক কর্ম। তাই শ্রী মার্কন্ডেয় ঋষির মালীকে বল ! তোমার মঙ্গলের জন্য শুভফল প্রদানকারী এক ব্রতের উপদেশ দিচ্ছি ।তুমি আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের ‘যোগিনী’ নামক একাদশী ব্রত পালন কর জাতে তুমি অবশ্যই কুষ্ঠব্যাধি থেকে মুক্ত হবে।
0 Comments