প্রাচীন মেসোপটেমিয়া ও মিশরীয় ধর্ম (খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ - ৫০০)
প্রাচীন মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক, সিরিয়া, কুয়েত অঞ্চল) এবং মিশরীয় সভ্যতায় ধর্ম ছিল সমাজের কেন্দ্রবিন্দু। এই ধর্মগুলো ছিল বহুদেবতাবাদী (Polytheistic), যেখানে বিভিন্ন দেবতার পূজা করা হতো।
মেসোপটেমিয়ার ধর্ম
বিশ্বাস ও দেবতারা
প্রাচীন মেসোপটেমীয়রা বিশ্বাস করত যে বিশ্ব এবং মানবজীবন দেবতাদের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তারা মূলত প্রকৃতি ও জীবনযাত্রার সাথে সম্পর্কিত দেবতাদের পূজা করত।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ মেসোপটেমীয় দেবতা:
- আনু (Anu) – আকাশের দেবতা
- এনকি (Enki) – জ্ঞান, জল ও সৃষ্টির দেবতা
- এনলিল (Enlil) – বাতাস ও ঝড়ের দেবতা
- ইন্নানা (Inanna) / ইশতার (Ishtar) – প্রেম, যুদ্ধ ও উর্বরতার দেবী
- মারদুক (Marduk) – ব্যাবিলনের প্রধান দেবতা
ধর্মীয় আচার ও উপাসনা
- বিশাল জিগগুরাত (Ziggurat) নামের মন্দিরে দেবতাদের পূজা করা হতো।
- পুরোহিতরা দেবতাদের জন্য খাবার ও অন্যান্য উপহার দিত।
- মানুষ বিশ্বাস করত যে দেবতারা যদি অসন্তুষ্ট হন, তবে দুর্ভিক্ষ, মহামারি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসতে পারে।
জীবনের পরে বিশ্বাস
- মেসোপটেমীয়রা বিশ্বাস করত, মৃত্যুর পর আত্মা "আন্ডারওয়ার্ল্ড" বা পাতালে চলে যায়, যা অন্ধকার ও নিরানন্দের স্থান।
প্রাচীন মিশরীয় ধর্ম
বিশ্বাস ও দেবতারা
মিশরীয়রা বিশ্বাস করত যে দেবতারা মানুষের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং মৃত্যুর পর মানুষ পুনর্জন্ম লাভ করতে পারে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ মিশরীয় দেবতা:
- রা (Ra) – সূর্যের দেবতা ও সৃষ্টিকর্তা
- ওসিরিস (Osiris) – মৃত্যুর দেবতা ও পরজীবনের বিচারক
- আইসিস (Isis) – মাতৃত্ব ও জাদুবিদ্যার দেবী
- হোরাস (Horus) – আকাশ ও রাজত্বের দেবতা
- অনুবিস (Anubis) – মৃতদের রক্ষক ও মমি তৈরির দেবতা
ধর্মীয় আচার ও উপাসনা
- বিশাল পিরামিড ও মন্দির নির্মাণ করে দেবতাদের সম্মান জানানো হতো।
- ফারাওরা (রাজারা) নিজেদের দেবতা রা-এর পুত্র বলে দাবি করত এবং তাদের মৃত্যুর পর দেবতায় পরিণত হওয়ার বিশ্বাস ছিল।
- মৃত্যুর পর জীবন নিয়ে মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিল, যেখানে "মা’আত" (ন্যায়বিচার) অনুসারে বিচার করা হতো।
মৃত্যুর পরে বিশ্বাস
- মানুষ মারা গেলে তার আত্মা "দ্বিতীয় জীবন" পেতে পারে।
- "ওসিরিসের বিচার": মৃত ব্যক্তির হৃদয় "সত্যের পালকের" সাথে ওজন করা হতো। যদি হৃদয় হালকা হতো, তবে সে স্বর্গে যেতে পারত, নাহলে তার আত্মা ধ্বংস হয়ে যেত।
- এজন্য মিশরীয়রা মমিফিকেশন প্রথা চালু করেছিল, যাতে মৃতদেহ সংরক্ষিত থাকে।
সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রভাব
- মেসোপটেমিয়া ও মিশরীয় ধর্ম সমাজ, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
- উভয় সভ্যতাই ধর্মকে কেন্দ্র করেই আইন, নৈতিকতা ও জীবনযাত্রা পরিচালনা করত।
- পরবর্তী ধর্মগুলো (যেমন: গ্রিক, রোমান, ইহুদিধর্ম, খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম) অনেকাংশে প্রাচীন এই বিশ্বাস ও আচার থেকে প্রভাবিত হয়েছে।
এই ধর্মগুলো শুধু আধ্যাত্মিক বিশ্বাসই নয়, বরং প্রাচীন বিশ্বের জীবনযাত্রা, শাসনব্যবস্থা ও সংস্কৃতিরও মূল ভিত্তি ছিল।
0 Comments